করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশে গত দুই বছরে দারিদ্র্যের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দরিদ্র হয়েছে আরও দরিদ্র, ধনীরা হচ্ছে আরও ধনী ফলে ধনী ও গরিবের বৈষম্য আরও বেড়েছে। এই দারিদ্র্য নিরসনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হলো বৈষম্য। গতকাল এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, দারিদ্র্যের কথা মাথায় রেখে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বিষয়টি বিমোচনে থাকছে বিশেষ নজর। যা দারিদ্র্য নিরসনের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। সানেমের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালে দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৬০ শতাংশে নেমেছিল। কিন্তু ২০২০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরের গবেষণা বলছে, দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়েছে। এবং করোনা মহামারী শুরু হলে গত এক বছরে দারিদ্র্যের সংখ্যা বাড়তে থাকে। নতুন করে দেশে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছে। দারিদ্র্য শুধুই একটি জাতীয় বা অর্থনৈতিক বিষয় নয়। দারিদ্র্যের গুরুত্ব এবং মানুষের জীবিকার ওপর এর প্রভাব বিবেচনায় এরই মধ্যে এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন ক্ষেত্র, যেমন- বাসস্থান, আহার, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ইত্যাদি থেকে উদ্ভূত বঞ্চনা দারিদ্র্যের তীব্রতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। করোনার কারণে কাজ হারিয়ে যারা দরিদ্র হয়েছেন তাদের অর্থনীতির মূলস্রােতে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, আগামী বাজেটে গরিবদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তাদের জীবন-জীবিকার জন্য জায়গা করে দেওয়ার পদক্ষেপ থাকবে নতুন বাজেটে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, পদক্ষেপ কতটুকু বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়া হবে সেটাই দেখার বিষয়। বাজেটে বিষয়টি বিশেষ নজর দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেটা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলেই দারিদ্র্য কমে আসবে। প্রকৃতপক্ষে সমতাভিত্তিক শান্তিপূর্ণ বিশ্ব সম্প্রদায় সৃষ্টি করতে পারলেই বিশ্ব থেকে দারিদ্র্য নির্মূল করা সম্ভব। দারিদ্র্য নিসরনের ক্ষেত্রে বৈষম্য নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই দারিদ্র্য বিমোচনে আরও সাফল্য আসবে। সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন নীতির অগ্রাধিকারেও পরিবর্তন আনতে হবে। শহরের দারিদ্র্য কমাতে হলে অবিলম্বে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। দারিদ্র্য বিমোচন এবং বৈষম্য হ্রাসকরণে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। এবং সামাজিক সুরক্ষায় সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। সেজন্য সবাইকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।
Leave a Reply